রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post
দুই মাসে ডজন খানেক হত্যাকাণ্ড

যশোরে ঘটেই চলেছে একের পর খুনের ঘটনা 

যশোর প্রতিনিধি

যশোরে ঘটেই চলেছে একের পর খুনের ঘটনা 

যশোরে কোনভাবেই খুনোখুনি বন্ধ হচ্ছে না। এ শহরের  কথা শুনলে মানুষ আতংকে থাকে। আর একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে খুনিরা বেপরোয়া হয়ে উঠায় যশোর পূর্বের চেহারায় ফিরেছে। 

যশোরে সর্বশেষ খুনের ঘটনা ঘটেছে ৮ মার্চ শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়ায় চাঁদাবাজি ডাকাতি বিস্ফোরক মাদকসহ ৩২ মামলার আসামি রমজানকে (৩২)। রমজান রেলগেট পশ্চিমপাড়ার ফয়েজ শেখের ছেলে। 

রমজানের শ্বাশুড়ি বাসনা বেগম জানান, রমজান অসুস্থ ছিলো। সন্ধ্যায় ওষুধ ও তরমুজ কিনে বাড়ি ফেরে। এরপর রাত সোয়া দশটার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়। নিজ বাড়ির অদূরে গলির মধ্যে ফেলে তাকে কুপিয়ে জখম করে স্থানীয় সন্ত্রাসী পিচ্চি রাজাসহ ৭/৮ জন। 

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান জানান, নিহত রমজান যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা রয়েছে। 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যশোর শানতলা-চুড়ামনকাঠি দাসপাড়ায় দুই দলের বিরোধ কেড়ে নিলো মেধাবী ছাত্র চয়নের প্রাণ। একই রাতে সদরের রামনগরে চোর অপবাদ দিয়ে এক ভাটা শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। যার লৌমহর্ষক ও পৈশাচিক নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে। 

এ ঘটনার আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি যশোর রেলস্টেশনে পুলিশের ‘কথিত সোর্স’ নামে পরিচিত কুখ্যাত সন্ত্রাসী রনি-প্রিন্সের নেতৃত্বে একদল মাদক কারবারি কুপিয়ে খুন করে জুম্মান নামে এক যুবককে। যার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ৬ মাদক কারবারি জুম্মানকে ধাওয়া করছে। এক পর্যায়ে তাদের ছুড়ে দেয়া চাকু জুম্মানের পায়ের রগ কেটে যায়। সেখানে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে চক্রটি এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। 

২১ ফেব্রুয়ারি জমি জায়গা নিয়ে বিরোধে খুন হয় রূপদিয়ার কাজী নাইমুর রহমান হিমেল। ২০ ফেব্রুয়ারি শংকরপুরের রিকশাচালক বাদশা মোল্যার মরদেহ উদ্ধার হয় বাহাদুরপুর এলাকা থেকে। রিকশা চালাতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর তার মরদেহ পায় পুলিশ। ১৬ ফেব্রুয়ারি মাদক ব্যবসায়ী চক্রের ছুরিকাঘাতে খুন হয় বারান্দীপাড়ার টগর নামে এক যুবক। ১৪ ফেব্রুয়ারি শার্শার পাকশিয়া থেকে উদ্ধার হয় এনামুল হক নামে এক ব্যক্তির লাশ। 

এর আগের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় খুন হয় যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেন। এনিয়ে  চলতি বছরের গত দুই মাসে যশোরে অন্তত ডজন খানেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

এসব খুনোখুনির ঘটনার মূলে রয়েছে পক্ষ-বিপক্ষের দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র বেচা-বিক্রিসহ নানা কারণ। তবে এরমধ্যে বেশ কিছু ঘটনায় জড়িতদের ডিবি পুলিশ আটক করেছে। 

৯ ফেব্রুয়ারি শহরতলির বালিয়াডাঙ্গা মানদিয়া জামে মসজিদের পেছন থেকে আগুনে পোড়া এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অর্ধপোড়া লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের ধারণা ছিলো পেট্রোল ঢেলে মুখমণ্ডলসহ সারা দেহ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্ট করেছে খুনি। 

পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় যশোর ডিবির ওসি রূপণ কুমার সরকারের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল সিসিটিভি ফুটেজ দেখে খুনিকে সনাক্ত ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে খয়েরতলা থেকে মেহেদী হাসান লিখন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে।  এইভাবে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটে চলছে।

টিএইচ